"বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী" – চিরকুট লিখে ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
ইমন সরকার, ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধি
"বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী" – এমন একটি চিরকুট লিখে আত্মহত্যা করেছেন ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (CSE) বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ধ্রুবজিৎ কর্মকার (২২)।
রবিবার (১৮ মে) দুপুর ১টার দিকে কলেজের অমর একুশে হলের ৩০৭ নম্বর কক্ষে ফ্যানের সাথে গলায় গামছা প্যাঁচিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন।
ধ্রুবজিৎ ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলার বিজয়পুর গ্রামের মনোতোষ কর্মকার ও সুপ্তা কর্মকার দম্পতির ছেলে।
চিরকুটে লেখা ছিল মর্মস্পর্শী বার্তা
নিজের ডায়েরিতে ধ্রুবজিৎ লেখেন:
"সরি মা, বাবা। আমি ধ্রুবজিৎ, সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। কার্ডের পিন (.......) টাকাগুলো মাকে দিয়ে দিও। আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা। পরের বার ফার্মেসি নিয়ে পড়বো। এত চাপ আমার পক্ষে নেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না। বিদায়। হরে কৃঞ্চ।"
পরীক্ষায় ‘নকল’ এর অভিযোগে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, সিএসই বিভাগের তৃতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষা চলছিল। রবিবার সকালের পরীক্ষায় অংশ নেন ধ্রুবজিৎ। পরীক্ষার কিছু সময় পর দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকরা তাকে নকলের অভিযোগে পরীক্ষার খাতা ও প্রবেশপত্র (অ্যাডমিট কার্ড) জমা দিতে বলেন এবং হল থেকে বের করে দেন।
এই ঘটনার পর তিনি নিজ কক্ষে ফিরে গিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। দুপুর ১টায় পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর তার রুমমেট দরজা বন্ধ পেয়ে জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে ধ্রুবজিৎকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। পরে দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কলেজ কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের বক্তব্য
ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, "ধ্রুবজিৎ কিছুদিন ধরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল বলে ধারণা করছি। আজকের পরীক্ষায় নকলের অভিযোগে হলে থেকে তাকে বের করে দেওয়া হয়। হয়তো এই অপমান সে সহ্য করতে পারেনি এবং হতাশা থেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।"
ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সাইফুল ইসলাম জানান, "লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।"
সমাজে প্রশ্ন তুলছে শিক্ষাব্যবস্থা ও মানসিক চাপ
ধ্রুবজিতের এই মর্মান্তিক মৃত্যু নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো ও শিক্ষার্থীদের ওপর তৈরি হওয়া মানসিক চাপে। শুধুমাত্র পরীক্ষার কারণে একজন মেধাবী শিক্ষার্থীর এমন পরিণতি যেন আর কাউকে স্পর্শ না করে – এমন প্রত্যাশাই এখন সকলের।
মতামত দিন